Thursday, August 16, 2018

একটি ফাঁসি || এ যেন এক অবিস্মরণীয় বিরল ইতিহাস ||

                                                              একটি ফাঁসি


১৯১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল এক ঘটনা ঘটে, কারণ এই দিন পৃথিবীতে প্রথম এবং শেষ কোনও হাতির ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যু দন্ড কার্যকর করা হয়। আজ আমরা সেই কাহিনীই জানবো বিস্তারিত।
ঘটনাটি আমেরিকার শহর টেনিসে, সেখানকার এক সার্কাস দলে কাজ করতো ম্যারি নামের এক হাতি। ম্যারি সার্কাসে দুর্দান্ত সব কসরত করে মানুষকে অভিভূত করে রাখতো। ম্যারিকেই দেখতেই সার্কাসে ভির হতো অনেক বেশি। আর এই সার্কাস দলের নাম ছিলো চার্লি স্পার্কস। এই দলের মালিক হাতিদের পুরোনো মাহুতকে অপসারণ করে নতুন কর্মচারী রেড এল্ড্রিক্সকে নিয়োগ দেন হাতিদের দেখা শুনা করতে এবং হাতিদের নিয়ে সার্কাস দেখাতে।

রেড হাতিদের বিষয়ে অতটা অভিজ্ঞ ছিলোনা। এছাড়া নতুন কর্মচারী হওয়ায় সে হাতিদের আচরণ ইচ্ছে এসবও ঠিকঠাক বুঝতোনা। একদিন খেলা চলার সময় রেড ম্যারির উপরে বসে সার্কাস দেখাচ্ছে। সব কিছু ঠিকঠাক চলছে ম্যারি দুই পা তুলে পেছন পায়ে ভর দিয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জন করে যাচ্ছে। কিন্তু মাহুত রেড অযথাই ম্যারির কানে লোহার শিক দিয়ে আঘাত করতে থাকে। এক সময় ম্যারির মেজাজ চড়ে যায়, সে রেডকে টেনে নিছে নামিয়ে পা দিয়ে পিষে মেরে ফেলে।ঘটনায় সমগ্র সার্কাস প্রাঙ্গণ এবং শহর জুড়ে ম্যারি বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠে। সবার এক দাবি হত্যাকারী হাতিকে সাঁজা দিতে হবে। তা না হলে আন্দোলন থামবেনা। একটি হাতি থেকে একজন মানুষের মূল্য অনেক বেশি। কেউই চার্লি স্পার্কস এর কোন শো দেখতে যাচ্ছিলোনা। সার্কাস দলটিই এক সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। সার্কাস মালিক কোন মতেই জনগণকে বুঝাতে পারছিলেন না রেড হত্যায় ম্যারির দোষ যতটা তার চেয়ে বেশি রেড ম্যারিকে রাগিয়ে দিতে কাজ করেছিল তাই ম্যারি রেগে যায়। ম্যারি একটি অবলা প্রাণী তার দোষ নেই। কিন্তু মানুষ তা বুঝলোনা।শেষে বাধ্য হয়েই সার্কাস মালিক সিদ্ধান্ত নিলেন ম্যারিকে হত্যা করা হবে, কিন্তু কিভাবে? বিশাল দেহী এশিয়ান এই হাতি এতোই বড় ছিলো তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পন্থা নিয়েই অনেক ভাবতে হয় সবাইকে। শেষে সিদ্ধান্ত হয় ম্যারিকে ক্রেনে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়া হবে। তাই বিশাল ক্রেন নিয়ে আসা হল। শহরের বিক্ষুব্দ সব নাগরিককে দাওয়াত দেয়া হলো। সবাই মেতে উঠলো ভয়ংকর এক হত্যা প্রত্যক্ষ করতে। সবার চোখে তখন প্রতিশোধের ক্রোধ টগবগ করছে। ম্যারিকে অবশেষে বিশাল এক চেইন দিয়ে ক্রেনের হুকে বাঁধা হলো।


ক্রেন যেই চালু করা হলো মুহূর্তে ম্যারিকে এক টানে ২০ ফুট উপরে তুলে নিলো। ম্যারি অনেক স্বাস্থ্যবান হওয়াতে ক্রেনের চেইন ছিঁড়ে ২০ ফুট উপর থেকে পড়ে যায় সে। এসময় ম্যারির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যায়। পা ভেঙ্গে যায়, গলা কেটে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে। কিন্তু মানুষগুলো! কারো মন গলেনা, আবার ম্যারিকে ক্রেনের চেইনের সাথে বাঁধা হলো। থেমে গেলে চলবেনা, শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে।পরের চেষ্টায় ম্যারি ফাঁসির চেইনে ছটফট করতে করেই মারা যায়। আসলে ম্যারি মারা যায়নি, ওইদিন চেইনে ঝুলে ফাঁসি দেয়া হয়েছে মানুষের মানবতা। আমরা আশরাফুল মাকলুকাত, সৃষ্টির সেরা জীব, আর আমরা মাঝে মাঝে এমন কাজ করি যা আমাদের পৃথিবীর নিকৃষ্ট প্রাণী থেকেও নিচে নামিয়ে দেয়!

                                                                                                                                               ©  সংগৃহীত

Saturday, August 11, 2018

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসক || বৈপ্লবিক সাধনে বিশ্ব জয়ের ইতিহাস

                            ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিশ্ব জয়ের ইতিহাস 



ব্রিটিশরা চায়ের নেশা পেয়েছিল চীনাদের কাছ থেকে। এ এমন এক নেশা, ব্রিটিশদের রাজকোষ ফাঁকা হওয়ার জোগাড়। চীন রৌপ্যমুদ্রা ছাড়া অন্য কিছুর বিনিময়ে চা রপ্তানি করতে রাজি ছিল না। সাদা চোখে দেখলে--চীনারা 
বাক্স ভর্তি গাছের পাতার গুঁড়া দিচ্ছে, বিনিময়ে নিচ্ছে টনকে টন রূপা!
আমিই শুধু কিনব, তুমি কিছু কিনবা না, তা তো হবে না। আমার পকেটের টাকায় শুধু তোমার পকেট ভারী করব 
কেন? আমিও কিনি, তুমিও কেনো। তুমি যদি না কেনো, এমন সিস্টেম করব, কিনতে বাধ্য হবা।
ব্রিটিশদের মতো ধুরন্ধর ব্যবসায়িক বুদ্ধি আর কারও ছিল না। এই বুদ্ধি খাটিয়ে আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে ছোট একটা দেশ ইংল্যান্ড পৃথিবীর অর্ধেকটার মালিক হয়ে গিয়েছিল। 
ব্রিটিশরা চীনাদের ধরিয়ে দিল আফিমের নেশা। এক ১৮৫৮ সালে চীনে সাড়ে ৪ হাজার টন আফিম রপ্তানি হয়েছিল, যা এখনকার হিসাবে সারা পৃথিবীতে ১০ বছর ধরে উৎপাদিত আফিমের সমান! এবার চীনের রাজকোষের রৌপ্যমুদ্রা জমতে থাকল ব্রিটেনে!
চা বনাম আফিমের নেশার এই বাণিজ্য চক্রটা বুঝলে পৃথিবীর এখনকার রাজনীতির হিসাবও সহজে বুঝতে পারবেন। বুঝতে পারবেন, ইসলাম, জঙ্গিবাদ এসব আসলে চোখের ঠুলি। পেছনে আছে কয়েক লাখ কোটি টাকার ব্যবসা! 



৫ মিনিট লাগবে পুরোটা পড়তে। পড়বেন? 😉😉👇👇

***আচ্ছা তাহলে দেরি না করে শুরু করে দিন :😉

২০ শতকের মাঝামাঝিতে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল, পৃথিবীর মূল জ্বালানি হবে তেল। আর এই তেলের প্রচুর পরিমাণ মজুদ আছে মধ্যপ্রাচ্যে। ব্রিটেন-আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুধু তেল কিনবে আর বিনিময়ে ঢালবে ডলারের পর ডলার? রাজকোষ ফাঁকা করবে শুধু শুধু? 
আরবদের নেশা ধরিয়ে দাও। যুদ্ধের নেশা। যে নেশা আফিমের নেশার চেয়েও ভয়াবহ!
গত বছর গ্রিনপিসের একটি প্রতিবেদন (Data: How guns and oil dominate UK-Saudi Arabia relationship) বলছে, ২০১৫ সালে ব্রিটেন সৌদি আরবের কাছ থেকে ৯০০ মিলিয়ন পাউন্ডের তেল কিনেছে। ওই বছর অক্টোবর পর্যন্ত অস্ত্র বিক্রি করেছে ৮৭২ মিলিয়ন পাউন্ড! কী অদ্ভুত ভারসাম্য!
***
‌'মধ্যপ্রাচ্যের সংকট' এই শব্দ দুটি শুনে শুনে বড় হওয়া প্রজন্ম আমরা। আরও কিছু শব্দ শুনতাম বিটিভির খবরে: পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় আজও বড় ধরনের সংঘর্ষের খবর...।
মধ্যপ্রাচ্যে এখনকার সংকটের সূচনা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষ থেকে। যার বীজটা রোপন করেছিল ব্রিটেন। 
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেন জেরুজালেম ও এর সংলগ্ন অঞ্চলটা তিনটা পক্ষকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল! আরবদের বলেছিল, ভাই, এ তো তোমাদেরই জায়গা। তুমিই পাবা। 
ইহুদীদের বলেছিল, আরেহ, তোমাদের স্বপ্নের স্বদেশভূমি তো এখানেই হবে। অবশ্যই তুমি পাবা। 
আর ফ্রান্সকে বলেছিল, দোস্ত ভাগাভাগিতে তোমাকে দিলাম সিরিয়া, আর আমি এই দিকটা রাখলাম, কেমন।
সবকিছু ঠিকমতো চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ইউরোপ থেকে জাহাজে করে হাজার হাজার ইহুদী চলে আসতে থাকে এই অঞ্চলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যা কয়েক লাখে পৌঁছায়। এই ইহুদিদের সঙ্গী ছিল ইউরোপে ভয়াবহ বিভীষিকার শিকার হওয়ার টাটকা স্মৃতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিরা ৬০ লাখ ইহুদীকে মেরে ফেলেছিল।
নিজেদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি, একটা দেশের স্বপ্ন; একটা নিরাপদ মানচিত্র তাদের টেনে এনেছিল ইসরায়েল নামের নতুন গঠিত এই রাষ্ট্রে।
সেখানে হাজার হাজার বছর ধরে আরব-ইহুদীরা সুখে-শান্তিতেই ছিল, পাশাপাশি। প্রতিবেশীর সঙ্গে ঝগড়া তখনই বাঁধে, যখন প্রতিবেশীর বাড়ির দেয়ালটা সরতে সরতে আপনার বাড়ির ভেতরে ঢুকতে থাকে। এই সহজ ব্যাপারটাই মধ্যপ্রাচ্যে জটিল আকার ধারণ করল।
নতুন ভিড় করা এই জনগোষ্ঠীর জন্য আরবদের বাধ্য করা হলো ছেড়ে দিতে। ফিলিস্তিনিদের ভিটেমাটি ছাড়া করা হলো। কোণঠাসা হতে হতে এখন তারা কেবল গাজা আর পশ্চিম তীরে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনিরা পাল্টা প্রতিরোধ হিসেবে শুরু করল গুপ্ত হামলা।
বিশ্বজুড়ে আজকের দুনিয়ার ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের পেছনে বড় ভূমিকা আছে এই অধ্যায়টির। যেটা কার্যত ছিল জমি-জমা নিয়ে বিরোধ, যার সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্কই নেই। যার প্রমাণ মিলবে এই তথ্যে, ফিলিস্তিনিদের সেই আন্দোলনে শুরুর দিকে ছিল জমি হারানোর অনেক খ্রিষ্টানও!
সেই লড়াইটা বদলাতে বদলাতে আজ রূপ নিল।
কে করল? কারা করল? রাশিয়াকে ঠেকাতে আল কায়েদা তৈরি করেছিল কারা? অন্যায় ইরাক যুদ্ধের ফসল হিসেবে আইএস জন্ম যে নিল, এর দায় কাদের?
যাদের মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র বিক্রি করতে হবে।
ভাই তেল কি শুধু কিনেই যাব, তুমি কিছু কিনবা না? তোমার তেল সম্পদ, তোমার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে। যাকে ভাই ভাবছ, সে-ই তো তোমার আসল শত্রু। মনে নাই, ৩০০ বছর আগে সে তোমার দাদার দাদার দাদার দাদার দাদার....দাদাকে খুন করছিল। ভুলে কেন যাচ্ছ, তুমি সুন্নি, আর ও শিয়া। তোমরা কীভাবে এক হও! ও কখনোই তোমার বন্ধু হবে না। কাল যে তোমার দেশ আর তেলখনিগুলো দখল করে নিবে না, তুমি নিশ্চিত? 
ইয়ে শোনো, আমার কাছে ভালো ফাইটার জেট আছে, দারুণ সব স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, মিসাইল, লঞ্চার, হেলিকপ্টার, ড্রোন, ট্যাংক...। কিনবা নাকি? তোমার জন্য একেবারে স্পেশাল প্রাইসে দিব, হাজার হোক তুমি আমার বন্ধু। তোমার সাথে কি আর বিজনেস করব? হে হে হে...।
★★★
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আলোচনা ও উদ্যোগের নামে যা কিছু আমরা শুনি, সব ভাঁওতাবাজি, ভন্ডামি। বরং বারবার উসকে দেওয়া হয় এই ক্ষত। অ্যান্ড্রু মারের হিস্ট্রি অব দ্য ওয়ার্ল্ড দেখার সময় এই পণ্ডিত মানুষটার একটা কথা আমাকে নাড়া দিয়েছিল। মার দেখিয়ে দিয়েছিলেন, পৃথিবী আসলে শান্তি চায় না, যুদ্ধ চায়। কারণ যুদ্ধই হচ্ছে আসল ব্যবসা। শান্তি জিনিসটা যে কেউ টাকা খরচ করে কিনতে চায় না!
সারা পৃথিবীতে যুদ্ধ বনাম শান্তি বনাম বাণিজ্যের এই যে অদ্ভুত এক চক্র; এ নিয়ে গবেষণায় সবচেয়ে বিখ্যাত সংস্থা হলো স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট। তাদের এক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ইউএসএ টুডে (10 companies profiting the most from war) দেখিয়েছিল, ২০১১ সালে পৃথিবীর বড় ১০০ অস্ত্র ব্যবসায়ী মিলে ৪১০ বিলিয়ন ডলারের (33050100000000 টাকা, হিসাব করে দেখেন কত) ব্যবসা করেছিল। 
মাত্র ১০টি কোম্পানি পৃথিবীর অস্ত্র ব্যবসার ৫০ শতাংশ (২০৮ বিলিয়ন ডলার) নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে ৭টি কোম্পানি আমেরিকার (লকহিড মার্টিন, বোয়িং, জেনারেল ডায়নামিকস, রেথিওন ডায়নামিকস, নর্থ্রপ গ্রুমান, এলথ্রি কমিউনিকেশন, ইউনাইটেড টেকনোলজিস)। ব্রিটেনের বা ইউরোপের তিনটি (বিএই সিস্টেম, এয়ারবাস, ফিনমেকানিকা)।
এরা শুধু যুদ্ধের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে না, যুদ্ধও নিয়ন্ত্রণ করে। যুদ্ধ বাঁধায়। রাজনীতিবিদদের ব্যবহার করে। এই কোম্পানিগুলো ২০১০ সালে ১৬৬.৪ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে মার্কিন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে লবিয়িং বা ডোনেশন নামের ঘুষের পেছনে। 
***
আজকের এই চেহারা, ইরাক, সিরিয়া, আইসিল...সবকিছুর মূলে বুশ প্রশাসনের চাপিয়ে দেওয়া ইরাক যুদ্ধ। এখন যেটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, আল কায়দার সঙ্গে সাদ্দাম হোসেনের কল্পিত যোগসূত্র তৈরি করে ইরাক দখল করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। এর পেছনেও তেল আর যুদ্ধের ব্যবসা।
কীভাবে?
ইরাক যুদ্ধের সবচেয়ে বড় আর্থিক লাভজনক প্রতিষ্ঠানের নাম হলিবার্টন। সে সময় ৪০ বিলিয়ন ডলারের কন্ট্রাক্ট পেয়েছিল তারা। জর্জ বুশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এই হলিবার্টনের প্রধান নির্বাহী ছিলেন। ২০০১ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ায় সেই পদ ছাড়েন। যদিও সিএনএন পরে ফাঁস করে দেয়, চেনি ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ও বছরে দেড় লাখ ডলার হিসেবে পেতেন হলিবার্টনের কাছ থেকে!
এই চেনিই বুশ সিনিয়রের আমলে বলেছিলেন, ইরাক যুদ্ধে যাওয়া ঠিক হবে না। তার ফল হবে ভয়াবহ। মাঝখানে হলিবার্টনে চাকরি করলেন। ব্যস্‌, পাল্টে গেল তাঁর মত! চেনি আসলে কার স্বার্থ উদ্ধার করতে চেয়েছিলেন?
মিস্টার চেনি, লাখ লাখ নিরীহ মানুষের রক্ত হাতে মেখে সেই হাতে খাবার খান কী করে আপনি! লাখ লাখ ঘূমন্ত শিশুর ওপর রাতের আঁধারে নেমে আসে যে বোমা; সেই রাতে কী করে ঘুমান আপনি!
***
ট্রাম্প একই পথে হাঁটছেন। গত কিছুদিন ধরে যা ঘটছে, তাতে মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় যুদ্ধের আলামতই পাচ্ছি। 
মুসলিমদের গালিগালাজ করে ক্ষমতায় আসা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম রাষ্ট্রীয় বিদেশ সফর ছিল মুসলিম দেশ সৌদি আরবেই। সেখানে মুসলিম দেশগুলোর সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন। মধ্যপ্রাচ্য সংকট সমাধানে ওপর জোর দিয়ে বেশ গালভরা বক্তব্য দিয়েছেন। এরপর ১১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি ধরিয়ে দিয়েছেন সৌদি আরবকে। 
লকহিড মার্টিনের সঙ্গে সৌদি সরকারের এই চুক্তির দর-কষাকষি করেছেন ট্রাম্পের জামাই জ্যারেড কুশনার (সিএনএন: Trump signs Kushner-negotiated $100B Saudi arms deal)।
***
ইউরোপে অস্ত্র বিক্রি কমছে। আর হু হু করে অস্ত্র বিক্রি বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্যে, আমাদের এশিয়ায়। গার্ডিয়ান জানাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে সৌদি আরবের অস্ত্র ক্রয় ২৭৫ শতাংশ বেড়েছে, ইউরোপীয় দেশগুলোতে কমেছে ৪১ শতাংশ। আর ২০১৫ সালের ১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের একটি খবরের শিরোনাম: Sale of U.S. Arms Fuels the Wars of Arab States। 
*** 
পৃথিবীতে শান্তি থাকলে অস্ত্র বিক্রি হবে না। পৃথিবীকে অশান্ত করা তাই খুব জরুরি। আরও অনেক হিসাব-নিকাশ আছে। আছে অনেক গুটি চালাচালি। অন্যের যুদ্ধে দূর থেকে কলকাঠি নাড়া। যাকে বলে প্রক্সি ওয়ার। যে অঞ্চলে যে ভাইরাস ছড়িয়ে দিলে কাজ হবে, সেখানেই তা-ই করা হচ্ছে। এক সময় পৃথিবীকে উত্তপ্ত করা হয়েছিল জাতীয়তাবাদের বড়ি খাইয়ে। মধ্যপ্রাচ্যে এই ব্যবসায়িরাই কাজে লাগাচ্ছে ধর্মকে! 
যে মানুষটা জিহাদের জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করছে, সে জানছেও না, দাবার ছকে সে আসলে সামনের সারির গুটি। যাকে প্রথম দফায় স্যাক্রিফাইস করাই দাবা খেলার ছক!
***
জানি না এই দৃশ্যপট কবে বদলাবে। জানি না এই পৃথিবীতে আদৌ শান্তি আসবে কি না। মনস্টার ইঙ্ক নামের একটা অ্যানিমেশন সিনেমা অদ্ভুত একটা ধারণার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। 
দৈত্যদের রাজ্যে মূল জ্বালানি হলো ভয়। বাচ্চাদের ভয় দেখালে যে এনার্জি তৈরি হয়, সেটা দিয়েই চলে দৈত্যদের কল-কারখানা; পুরো দেশ। 
হঠাৎ একদিন জানা গেল, ভয় পেয়ে বাচ্চারা চিৎকার করে কাঁদলে যত বিদ্যুৎ তৈরি হয়, তার কয়েক শ গুণ বেশি বিদ্যুৎ তৈরি হয় বাচ্চারা খিলখিল করে হাসলে। 
তখন থেকে মনস্টার ইঙ্ক নামের সেই কোম্পানিটি ভয়ের বদলে বাচ্চাদের হাসানোর প্রতিযোগিতায় নামল।
আমাদের পৃথিবীর বড় বড় মনস্টার ইঙ্করাও যদি কখনো বোঝে, অশান্তি নয়, শান্তিতেই তৈরি হয় সবচেয়ে বেশি এনার্জি...। এটুকুই শুধু আশা!



                                                                                                                                                                                                                                                     সংগৃহীত